Thursday, November 7, 2013

বৈবাহিক সমস্যা ও কুরআনের সমাধান




স্ত্রী পেটানো কি ইসলাম সমর্থন করে­ এ প্রশ্নটি দীর্ঘকাল ধর্মপরায়ণ শিক্ষিতা মুসলিম নারীদের মনে কাঁটা হয়ে বিঁধে ছিল। বিভিন্ন সময়ে সূরা নিসার এই ‘দরাবা’ সংক্রান্ত ৩৪ নম্বর আয়াতটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। কোনো কোনো ইসলামি চিন্তাবিদ একে ‘চল্লিশ ঘা’ আবার কেউ কেউ ‘মৃদু আঘাত’ বলেছেন। কিন্তু সব ক’টি ব্যাখ্যার সাথেই শারীরিক আঘাত জড়িত রয়ে গেছে। ফলে এর একটি সুস্পষ্ট প্রভাব আমাদের সমাজে দেখা যায়। কারণে-অকারণে স্ত্রীকে আঘাত করা তাই অনেক মুসলিম পুরুষই তাদের অধিকার মনে করেন। অনেকে আবার একটু আগ বাড়িয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে শাসন করাকে নিজ পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন। শরীরের আঘাত শুধু শরীরের সাথেই সম্পর্কিত থাকে না, তা মনের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শারীরিক আঘাত কম হোক বা বেশি হোক তা আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন যেকোনো নারীর মনেই কঠিন অপমানবোধ সৃষ্টি করে। এমনকি তা ওই নারীর পুরুষ আত্মীয়দের মনেও কষ্ট দেয়। কাজেই বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান বলেছেন, সূরা নিসায় ব্যবহৃত ‘দরাবা’ শব্দটির অর্থ ‘পেটানো’, ‘প্রহার’, এমনকি ‘মৃদু আঘাত’ হিসেবেও নেয়ার অবকাশ নেই। তিনি তার Marital Discord : Recapturing the Full Islamic Spirit of Human Dignity বইতে বোঝাতে চেয়েছেন­ আরবি অভিধানে ‘দরাবা’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে; সে ক্ষেত্রে অন্য সব অর্থ বাদ দিয়ে স্ত্রীর ক্ষেত্রে ‘পেটানো’ বা ‘আঘাত করা’ অর্থটি গ্রহণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বিশেষ করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে, তা ভেবে দেখতে হবে।

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব




এ পৃথিবীতে ১ লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর বা নবী রাসূল এসেছেন। তারা স্বজাতির মাতৃভাষায় কথা বলতেন। তাদের প্রতি নাজিলকৃত আসমানি কিতাব ও ছহিফাগুলো স্বীয় মাতৃভাষায় প্রচার করতেন। আল্লাহপাক কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই পাঠিয়েছি যাতে তাদের পরিষ্কার করে বুঝাতে পারে। (সূরা ইব্রাহিমঃ আয়াতঃ ৪)। হাদিস শরিফ থেকে প্রমাণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহপাক পয়গম্বরেরগণের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন সেগুলোর আসল ভাষা ছিল আরবি জিব্রাঈল আঃ তার নিজ নিজ পয়গম্বরের জাতীয় ভাষায় অনুবাদ করে নবী রাসূলগণের কাছে পৌঁছাতেন। যেমন তাওরাত, জাবুর, ইনজিল প্রভৃতি কিতাব কোনোটা ইবরানি, কোনোটা হিব্রু, কোনোটা সুরিয়ানি বা ইউনানি ভাষায় রূপান্তরিত করে নবী-রাসূলগণ তাদের মাতৃভাষায় বা স্বজাতীয় ভাষায় বুঝাতেন। এতে বোঝা গেল যে, প্রত্যেক নবী-রাসূলই আপন জাতির মাতৃভাষায় আসমানি গ্রন্থাবলির নির্দেশিকা প্রচার করতেন। মূলত পয়গম্বরদের ইসলাম প্রচারের মাধ্যম ছিল মাতৃভাষা।
বিশ্বনবীর মাতৃভাষায় ইসলাম প্রচারঃ আমাদের সর্বশেষ প্রিয়নবী বিশ্বনবীর মাতৃভাষা ছিল আরবি। আর সর্বশেষ আসমানিগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে প্রিয়নবীর মাতৃভাষাতেই। অতঃপর তিনি মাতৃভাষাতেই কুরআনের বাণী প্রচার করে জগৎকে আলোকিত করেছেন।

আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার পথ

তামান্না রহমান সঞ্চিতা

সমুদয় প্রশংসা এই বিশ্বজগতের মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি
মানবজাতির হেদায়াত ও মুক্তির জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। হযরত
আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম নবী ও রাসূল। কেবল এখানেই শেষ নয়, আল্লাহ্-তাআলা নবী-
রাসূলদের নিকট কিতাবও প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী
উম্মতকে পরিচালিত করতে পারেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র
প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর মাধ্যমে নবী-রাসূলদের আগমন ধারা সমাপ্ত
হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী-রাসূল আগমণ করবেন না। আসবেনা কোন
আসমানী কিতাবও। মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়, মহাগ্রন্থ “আল-কোরআন” সর্বশেষ ও
চূড়ান্ত আসমানী কিতাব। এটি শুধু আরব জাতির জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর

সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সালাত




ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সালাত বা নামাজ তার মধ্যে অন্যতম এবং ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই পবিত্র কুরআনে ৮২ জায়গায় সালাত কায়েম করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ইসলামে সালাতের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি আল্লাহ পাকের রহমত এবং ইহ-পরোকালের মুক্তিলাভের প্রধান অবলম্বন হিসেবে সালাতের বৈশিষ্ট্য তাৎপর্যবহ।
আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে থাকি। এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে ১৭ রাকাত ফরজ সালাত আল্লাহ পাক নির্ধারিত করে দিয়েছেন। ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজ সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আল্লাহ পাকের হুকুম। সালাত (নামাজ) প্রধানত চার প্রকার। ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও নফল। স্বয়ং আল্লাহ পাক যে সালাত আদায় করতে বলেছেন, তাই ফরজ সালাত। ফরজ সালাত আবার দুই প্রকার­ ফরজে আইন ও ফরজে কেফায়া। ফরজ সালাত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সমানভাবে ফরজ। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমার সালাত। ফরজে কেফায়া প্রত্যেকের ওপর সমান ফরজ হলেও তা একটি এলাকায় সবার পক্ষে কিছুসংখ্যক লোক আদায় করলে এই ফরজে কেফায়া আদায় হয়ে যায়। যেমন জানাজার সালাত। সুন্নাত সালাত আবার দুই প্রকার­ সুন্নাতে মোয়াক্কাদা ও সুন্নাতে জায়েদা।
ওয়াজিব সালাত হচ্ছে­ দুই ঈদের সালাত ও বিতরের সালাত। নফল সালাত আদায় করার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত সাওয়াব অর্জনের স্বীকৃতি। প্রকৃতপক্ষে বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। মাকরুহ সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় নফল সালাত আদায়কালে অশেষ রহমত, বরকত ও নেয়ামত পাওয়া যায়।

কোরআন ও হাদীসে নারীর অধিকার


০ ‘পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে। তেমনি নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রীদের ও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর। আর নারীদের উপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আলস্নাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, (সুরা বাকারা ২২৮ আয়াত)।

০ ‘স্ত্রীরা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ’ (সুরা বাকারা ১৮৭ আয়াত)।

০ ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর খুশি মনে দাও’ (সুরা নিসা-৪ আয়াত)।

০ পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে (সরা নিসা-৭ আয়াত)।

০ তোমরা স্ত্রীদের (হকের ) ব্যাপারে আলস্নাহকে অবশ্যই ভয় করে চলবে।

০ ‘রাসুলস্নাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের নিকট সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম’ (তিরমিজী)।

রোগীর সেবা শ্রেষ্ঠ ইবাদত



প্রত্যেক ধর্মেই রোগীর সেবা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর বিনিময় হিসেবে বড় ধরনের পুণ্য কিংবা প্রতিদানেরও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইসলাম ধর্মে নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুণ্য হলো মানুষের উপকার করা। আর সবচেয়ে জঘন্য পাপ হলো অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে কষ্ট দেয়া। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, কেউ যদি কোনো মানুষের একটু উপকার করে কিংবা চলার পথে কোনো পথচারীর কষ্ট হবে ভেবে পথের ওপর থেকে একটি কাঁটা বা কষ্টদায়ক এক টুকরো বস্তু উঠিয়ে নিয়ে দূরে ফেলে দেয় তাহলে ওই ব্যক্তি মসজিদে বসে ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও উত্তম নেকি পাবে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে রোগীর সেবাও যে একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত সেটি সহজেই অনুমেয়। হাদিসের আলোকে দেখা যায়, একজন মুসলমানের আরেক মুসলমানের কাছে যে ছয়টি হক রয়েছে তার মাঝে প্রথম এবং প্রধান হক হলো রোগ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। সাধ্যমতো সেবা শুশ্রূষা করা। এটি রোগীর প্রতি দয়া নয় বরং রোগীর হক আদায় করা। আল্লাহ হয়তো বা আল্লাহর হকের জন্য তাঁর বান্দাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হকের জন্য তাঁর বান্দা ক্ষমা না করলে তা কখনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
রোগীর সেবা কখনো কখনো নফলের চেয়েও বড় নফল, সুন্নতের চেয়েও বড় সুন্নত, এমনকি ফরজের চেয়েও বড় ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ইসলামী বিধান মতে, কোনো ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর যদি পাশে কোনো রোগীর হঠাৎ রোগ বেড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুমুখে উপনীত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তখন ওই নামাজির ফরজ নামাজও ভেঙে ফেলে ওই রোগীর জান বাঁচানো নামাজের চেয়েও বড় ফরজ হয়ে দাঁড়াবে। ইবাদতের নিয়তে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো রোগীকে প্রয়োজনে মাত্র একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়েও কিংবা শুধু একটু সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েও আমরা অনেক বড় ধরনের পুণ্য অর্জন করতে পারি। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদিস রয়েছে।

Sunday, March 31, 2013

ইসলামে পারিবারিক বিকাশের কথা

ইসলাম পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রের মতো পারিবারিক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানবজাতির প্রাথমিক ভিত্তি হলো তার পরিবার। পরিবার থেকেই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সমাজ, অতঃপর অর্থনৈতিক লেনদেন, সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুত্রপাত। এভাবে মানবজাতির বিকাশ, সমাজ সভ্যতার সৃষ্টি, সংস্কৃতিবোধের উন্মেষ। যে জাতির পারিবারিক বন্ধন যত দৃঢ় সে সমাজ ততই উন্নত ও শক্তিশালী। পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন মুসলিম সমাজে তার সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর এই পারিবারিক সুদৃঢ় বন্ধনের ওপর ঈর্ষান্বিত হয়ে